Thursday, March 16, 2017

জমঈয়তে আহলে হাদীসের পরিচয়

জমঈয়তে আহলে হাদীসের পরিচয়


বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়ার সুবাদে ‘বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস’ মুসলিম বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সংগঠন হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যে এ দেশের প্রায় ৩ কোটি জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করছে এ সংগঠনটি। ভারতীয় উপমহাদেশে এ সংগঠনের জন্ম হয়। এক ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে। তবে শুরু থেকেই প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মসূচীর পরিবর্তে কেবল সমাজ সংস্কার এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে জমঈয়ত।
১। অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস কনফারেন্স-প্রথম ভারতীয় আহলে হাদীস সংগঠন:-
ভারতীয় উপমহাদেশে তাওহীদ ও সুন্নাহর প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং শিরক-বিদআত-কুসংস্কার তথা অনৈসলামী কার্যকলাপ থেকে গণমানুষকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের আহলে হাদীসগণ সাংগঠনিক ব্যবস্থঅপনায় বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সিদ্ধন্ত নেন ১৯০৬ সালে। ওই বছর ২২ ডিসেম্বর (৬ যুলকা’দা ১৩২৪ হিজরী) মিয়া নাযীর হুসাইন দেহলভী (রহ)-র কয়েকজন কীর্তিমান ছাত্র-হাফেয আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (১৮৪৪-১৯১৮), হাফেজ আব্দুল আযীয রহীমাবাদী (১৮৫৫-১৯১৮), শামসুল হক আযীমাবাদী (১৮৫৭-১৯১১) আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (১৮৬৫-১৯৩৫), আয়নুল হক ফলওয়ারী (১৮৬৯-১৮১৫), ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (১৮৬৮-১৯৪৮), প্রমুখ আলেম বিহারের ‘আরাহ’ জেলায় মাদরাসা আহমাদিয়াহ-র বার্ষিক সেমিনারে একত্রিত হন। তাঁরা উপস্থিত সুধীবৃন্দ এবং ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে ‘অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস কনফারেন্স’ নামে একটি সর্বভারতীয় আহলে হাদীস সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন যথাক্রমে হাফেজ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী, ছানাউল্লাহ অমৃতসরী এবং শামসুল হক আযীমাবাদী (রহ)।
১৯০৬ হতে ১৯৪৭ পর্যন্ত ৪০ বছরে পবিত্র করআন তাফসীর সহীহ হাদীস ইসলামী বই-পত্র ইত্যাদি ব্যপকভাবে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এ সংগঠনটির অধীনে পরিচালিত ১২৩টি মাদরাসা এবং মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক মিলে ৩০ টি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। আয়োজন করে অসংখ্য সভা-সমাবেশ, বাহন-মুনাযারা ইত্যাদি। কবর পূজার বিরুদ্ধে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া নিয়মিত মুবালি্লগবৃন্দ সারা ভারতে ব্যাপক দাওয়াতী কাজ করেন। তবে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ফলে সংগঠনটির কার্যক্রম শুধু ভারতীরা ভূখন্ডেই সীমিত হয়ে পড়ে। ১৯৪৭-র পর পাক্ষিক ‘তজর্ুমান’ নামে এ সংগঠনের মুখপত্র প্রকাশিত হয়।
২. আঞ্জুমানে আহলে হাদীস বাঙ্গালা ও আসাম:-
এদিকে মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী (১৮০৫-১৯০২) রহিমাহুল্লাহর বাঙ্গালী ও আসামী ছাত্ররা বাংলাভাষী মানুষের মাঝে তাওহীদ ও সুন্নাহর দাওয়াত সমপ্রসারণের লক্ষ্যে কলিকাতার ১ নং মারকইস লেন, মিছরীগঞ্জ আহলে হাদীস জামে মসজিদে মিলিত হয়ে ১৯১৪ সালে গঠন করেন। ‘আঞ্জুনামে আহলে হাদীস বাঙ্গালা ও আসাম’ সভাপতি নির্বাচিত হন বর্ধমান জেলার কুলসোনার বিশিষ্ট আলেম মাওলানা নে’মাতুল্লাহ (বাংলা ১২৬৬-১৩৫০) এবং সেক্রেটারী নির্বাচিত হন হুগলী জেলার মাওলানা আব্দুল লতীফ (১৮৭৮-১৯৪৯), জয়েন্ট সেক্রেটারী নির্বাচিত হন বাংলাদেশের মাওলানা আব্বাস আলী। ১৯১৬ সালের ৯, ১০ ও ১১ মার্চ ‘অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস’ কনফারেন্সের কলকাতা অধিবেশনে মাওলানা হাফেড আব্দুল্লাহ গাজীপুরী, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, মাওলানা আব্দুল আলীম রহীমাবাদী, মাওলানা আবুল কাসেম বেনারসী প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতির আঞ্জুমানে আহলে হাদীসকে ‘অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস কনফারেন্সের’ প্রাদেশিক শাখার মর্যাদা দেওয়া হয়।
আঞ্জুমানে আহলে হাদীস বাঙ্গালা ও আসাম’ এর মুখপত্র ‘মাসিক আহলে হাদীস’ ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ‘মাসিক’ হিসেবে চলার পর ১৯২৭ সালে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হিসাবে অত্নপ্রকাশ করে। তবে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পত্রিকা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পত্রিকাটি দাওয়াত ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সমপ্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর সম্পাদক প্রখ্যাত আলেম মাওলানা বাবর আলী আঞ্জুমানের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে মাওলানা এফাজুদ্দীন, মাওলানা রহীম বখশ, মাওলানা আব্দুল লতীফ, মাওলানা আব্দুন নূর প্রমুখকে নিয়ে বাংলার বিভিন্ন এলাকায় সফর করে দাওয়াত ও সাংগঠনিক কার্যক্রম ছড়িয়ে দেন। পত্রিকা ছাড়াও বেশ কিছু মূল্যবান বই প্রকাশ করে আঞ্জুমান। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আঞ্জুমানের তৎপরতা ক্রমশ স্তিমিত হয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য,
আঞ্জুমানের জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা আব্বাস আলীই বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম কুরআন মাজীদের পূর্নঙ্গ অনুবাদ প্রকাশ করেন।
৩। লিখিল বঙ্গ ও আসাম জমঈয়তে আহলে হাদীস:-
‘আঞ্জুমানে আহলে হাদীস বাঙ্গালা ও আসাম’ এর কার্যক্রম স্তিমিত হওয়ার পর নব উদ্যমে এ অঞ্চলে কাজ শুরু করার লক্ষ্যে গঠিত হয় ‘নিখিল বঙ্গ ও বা আসাম জমঈয়তে আহলে হাদীস। বার্তমান বাংলাদেশের রংপুর জেলার হারাগাছা বন্দরে ১৯৪৬ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ এপ্রিল আল্লামা আব্দুল্লাহেল বাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক আহলে হাদীস কনফারেন্স। উক্ত কনফারেন্স পাকিস্তানের মাওলানা ইসমাঈল গুজরানওয়ালা, বিহারের মাওলানা আব্দুল্লাহ আরাভী, মাওলানা আবুল কাসেম বেনারসী প্রমুখ বিশিষ্ট আলেম ও অতিথি অংশ গ্রহণ করেন। কনফারেন্সে সুদক্ষ সংগঠক, বিশিষ্ট লেখক ও বাগ্মী মরহুম মাগফুর আল্লাম আব্দুল্লাহের কাফী আল কুরায়শী (১৯০০-১৯৬০) কে সভাপতি করে গঠিত হয় ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমঈয়তে আহলে হাদীস’। কলকাতার ১ নং মারকুইস লেনে অবস্থিত ঐতিহাসিক সিরীগঞ্জ আহলে হাদীস জামে মসজিদে স্থাপিত হয় এর সদর দফতর।
৪। পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীস:-
১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার মিসরীগঞ্জ জামে মসজিদে অবস্থিত জেনারেল কমিটির সভায় জমঈয়তের সদর দফতর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) পাবনায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেমতে ঐ বছর ৭ মার্চ পাবনা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বাঁশবাজার আহলে হাদীস জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জমঈয়তের নয়া সদর দফতর উদ্বোধন করা হয়।
১৯৪৯ সালের ১২ ও ১৩ মার্চ রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে নওদাপাড়ায় আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল কুরায়শীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম উমঈয়তে আহলে হাদীসের দ্বিতীয় কনফারেন্স। কনফারেন্সে আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল কুরায়শীকে সভাপতি, মাওলানা কবীর উদ্দীন আহমদ রহমানী এবং মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাসুদেবপুরীকে সহ-সভপতি এবং মাওলানা আব্দুর রহমান বিএবিটি কে জমঈয়তের জেনারেল সেক্রেটারী নির্ধরণ করা হয়।
১৯৪৭ সালের ২৭ মে পাবনায় মরহুম আল্লামা আব্দুল্লাহেল বাকী জমঈয়তের মুদ্রণ ও প্রকাশনা সংস্থা (আল হাদীস প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং হাউজ) উদ্বোধন করেন। ওই বছরই অক্টোবর মাসে জমঈয়তের মুখপত্ররূপে ‘মাসিক তজর্ুমানুল হাদীস’ প্রকাশিত হয়। সম্পাদনা করেন স্বয়ং জমঈয়ত সভাপতি আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল কুরায়শী (রহ)। বাংলা ভাষার নেতৃস্থানীয় এ ইসলামী গবেষণা পত্রিকাটি ১৯৭০ সার পর্যন্ত চালু চিল।
১৯৫৩ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনায় অনুষ্ঠিত জেনারেল কমিটির সভায় ‘নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমঈয়তে আহলে হাদীস’ এর নতুন নাম করণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীস’। ওই সময় জমঈয়তের জেলা সংগঠন ছিল মাত্র ৪টি-পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া এবং খুলনা। সে সময় জমঈয়ত ব্যাপক সভা-সমাবেশ এবং সেমিনার আয়োজন করে। নবরাষ্ট্র পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ইসলামী করণের লক্ষ্যে মাননীয় জমঈয়ত সভাপতি আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল কুরায়শী (রহ) রচনা করেন দুটি অসাধারণ গ্রন্থ: ‘ইসলামী শসনতন্ত্রের সূত্র’ এবং ‘পাকিস্তানের শাসন সংবিধান’। ওই সময় জমঈয়ত একদিকে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সহীহ দাওয়াত সমপ্রসারণে সর্বশক্তি নিয়োগ করে; অপর দিকে সহীহ আকীদা ও আমলে অভ্যস্থ জনগোষ্ঠি আহলে হাদীস সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। শুধু আহলে হাদীস জনগোষ্ঠি নয়, বরং বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য বজায় রাখার জন্য মাননীয় জমঈয়ম সভাপতির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইসলামী পন্থী বিভিন্ন সংগঠন পাবনা ঈদগাহ ময়দানে ‘এছলামী ফ্রন্ট’ সম্মেলনে সমবেত হয়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ওই সম্মেলন আজও এক অবিস্মরণীয় এবং অভূতপূর্ব সাফল্য বিবেচিত হচ্ছে।
১৯৫৬ সালের অক্টোবর মাসে জমঈয়তের দপ্তর পাবনা হতে ঢাকায় (৮৬, কাজী আলাউদ্দীন রোড ঠিকানায়) স্থানান্তরের পর হতে ১৯৬০ সালের ৪ জুন জমঈয়তের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত সীমিত সময়টি জমঈয়তে ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জল অধ্যায়। এসময় দেশব্যাপী গঠণমূলক তৎপরতা বৃদ্ধিসহ ঢাকায় একাধিক সফলকর্মী সম্মেলন, দু’টি জেনারেল কমিটির অধিবেশন এবং অন্যান্য তৎপরতার মাধ্যমে দেশের সমগ্র আহলে হাদীস জাম ‘আতে নবপ্রাণ সঞ্চারিত হয়।
ঢাকায় আসার পর মাসিক তজর্ুমানুল হাদীসের প্রকাশনা অব্যাহত রেখে ১৯৫৭ সালের ৭ অক্টোবর মুসলিম সংহতির দৃপ্ত নকীবরূপে ‘সাপ্তাহিক আরাফাত’ আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ পত্রিকার মাধ্যমে কুরআন হাদীস ও ইসলামের অনাবিল শিক্ষার প্রচার ছাড়াও ইসলাম পন্থী সমুদয় দলের সমবায়ে ইসলামীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নিরন্তর আহ্বান জানান হয়। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে জমঈয়ত সভাপতির যোগদান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ জমঈয়তকে শক্তিশালী করে তোলে এবং জমঈয়তের প্রভাব দেশে এবং দেশের বাহিরে বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
১৯৬০ সালের ৪ জুন আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কুরায়শীর ইন্তেকালের পর ১৫ জুন, জমঈয়তের কার্যকরি কমিটির সভায় ড. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল বারী পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীসের সভাপতি নির্বচিত হন এবং পরবর্তী জেনারেল কমিটির সভায় উক্ত নির্বাচন সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জমঈয়ত তার বিভিন্নমূখী কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখে এবং সাংগঠনিক তৎপরতা ব্যাপক শক্তিশালী করা হয়। সাথে সাথে নতুন কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জামা আতের মাঝে সঞ্চারিত হয় নব জীবন ও উদ্দীপনা। এ পর্যায়ে তানযীম ও তাবলীগের কাজ জোরদার করা হয় এবং আল্লামা মরহুমের ও অন্যান্যদের মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।
১৫ বছর পর বিপূল উৎসাহ উদ্দপনায় পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীসের সভাপতির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় জমঈয়তের তৃতীয় কনফারেন্স অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়। রাজশাহী জোলার নবাবগঞ্জের একটি আম্র বাগিচার ১৯৬৪ সালের ৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল প্রফসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কনফারেন্স বিশেষ আকর্ষণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীসের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ। পশ্চিম পাকিস্তান জমঈয়ত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন পশ্চিম পাক জমঈয়তের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহাম্মদ ইসমাঈল গুজরানওয়াল, প্রচার সম্পাদক আলহাজ্জ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক হানাফী এবং কার্যকরী সংসদের অন্যতম সদস্য সারগোধার জামে মসজিদের খতীব মাওলান মুহাম্মদ ইসহাক রহমান।
এ কনফারেন্স পূর্ব পাকিস্তান হতে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ গ্রহণ করেছিলেন যাঁরা তাদের অন্যতম হলেন, অধ্যাপক মাওলানা শাইখ আব্দুর রহীম, মাওলানা আবুল মুকাররম সাদ ওয়াসকাস রহমানী, মাওলা শামসুল হক সালাফী, মোঃ হাসান আলী এডভোকেট এম, এন, এ, কাজী মুহাম্মদ আব্দুল কাদের (পূর্ব পাক সরকারের খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী) আলহাজ্জ মাওলানা সৈয়দ রশীদুল হাসান, (অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ), আলহাজ্জ, মো: মাহমুদ আলী খান (অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়লা জজ), মাওলানা আবূ দাঊদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ নদভী, মাওলানা মুন্তাসির আহমদ রহমানী, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আদমুদ্দীন, মাওলানা জিল্লুর রহমান আনসারী, মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ সালাফী, মাওলানা মীর আব্দুস সালাম, মো: আযিমুদ্দীন, এডভোকেট মীর এ,টি,সাদী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান মৌভাবী, মাওলানা আব্দুল ওয়াজেদ জামালী, মাওলানা মুহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ, মাওলানা আফতাব আহমদ রহমানী, মাওলানা মামুনুর রশীদ সিদ্দীকী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মতীউর রহমান, মো: ফজলুল করীম, আলহাজ্ব মাওলানা আসাদুল্লাহেল গালেব, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা হাবীবুল্লাহ খান রহমানী মাওলানা রামায়ান আলী, মাওলানা আব্দুল্লাহ ইবনে ফযল, মাওলানা আব্দুস সামাদ, মাওলানা আব্দুর রহমান বি.এ.বি.টি. মুহাম্মদ কামরুজ্জামন, মাওলানা এম.এন.এ. মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এম.পি.এ. মুহাম্মদ সিরাজুল হক তালুকদার এম.পি.এ. মৌ: মুহাম্মদ আব্দুর রহমান এম.পি.এ. মৌ: মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এম.পি.এ মৌ: রঈসুদ্দীন আহমদ এম.পি.এ. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ, এম.পি.এ ডক্টর মুহাম্মদ এরফান আলী, মৌ: দেওয়ান আব্দুর গাফফার এম.পি.এ মৌ: অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল গনী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফ ফারুকী, এডভোকেট মুহাম্মদ আয়েন উদ্দীন এম.পি.এ মৌ: জসিমুদ্দীন আহমেদ এম.পি.এ প্রমুখ।
কনফারন্সের তৃতীয় দিবসের শেষ অধিবেশনে সর্বস্মতিক্রমে ১৬টি জেলা জমঈয়ত হতে দুইশত পঞ্চাশ জন সদস্য মনোনিত করে পূর্ব পাকিসরান জমঈয়তে আহলে হাদীসের জেনারেল কমিটি এবং ৩২ সদস্য বিশিষ্ট নিম্নরূপ কার্যকরী সংসদ গঠিত হয়।
সভাপতি: ডক্টর মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল বারী
সহ-সভাপতি: মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাসুদেবপুরী
মাওলানা শামসুর হক সালাফী ও মাওলানা আফতাব আহমদ রহমানী
জেনালেল সেক্রেটারী: মাওলানা আব্দুর রহমান
অর্গানাইজিং সেক্রেটারী: মাওলানা বকশ নদভী
সহকারী সেক্রেটারী: মাওলানা আব্দুল হক হক্কানী
সদস্য: ২৫ জন।
অনুমোদিত জেলা জমঈয়াত এর তালিকা।
১। কুষ্ঠিয়া, ২। কুমিল্লা, ৩। খুলনা ৪। যশোর, ৫। চট্টগ্রাম, ৬। ঢাকা, ৭। দিনাজপুর, ৮। নোয়াখালী ৯। পাবনা, ১০। ফরিদপুর, ১১।বগুড়া, ১২। বরিশাল, ১৩। ময়মনসিংহ, ১৪। রংপুর, ১৫। রাজশাহী এবং ১৬। সিলেট।
১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভু্যত্থানের পর পরই পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীস এর নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় “বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদী”। ৮৬, কাজী আলাউদ্দীন রোডের অফিসগৃহ ত্যাগ করে। ৯৮, নওয়াবপুর রোডের ৫ কাঠা জমিসহ বর্তমান গৃহটি খরিদ করে সদর দফতর স্থাপন করে। কিছু দিন পর একই প্লটের বাকী ৫ কাঠা বাংলাদেশ সরকারের নিকট হতে জমঈয়তের নামে লীজ গ্রহণ করা হয়। প্রায় একই সময়ে জমঈয়ত উত্তর যাত্রাবাড়ী ২৬ কাঠা জমি এবং মাদরাসা মুহাম্মাদীয় আরাবীয়ার নামে ১৭ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়। সেখঅনে এখন প্রতিষ্ঠিত আছে দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদরাসা ‘মাদরাসা মুহাম্মদীয়া আরাবীয়’।
দেশ স্বাধীন হওয়ার চারবছর পর ১৯৭৬ সালে সালে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হদীসের মুহতারাম সভাপতি ড. আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল বারীর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় সংগঠনের চতুর্থ কেন্দ্রীয় কনফারেন্সের আয়োজন করা হয় পাবনায়। ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বৃহস্তপি, শুক্র, ও শনিবার তিন দিন ব্যাপী এ কনফান্সে দেশের প্রথিতয়শা উলামায়ে দীন ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ স্বতঃস্ফ্থর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রফেসর ড. ্মুহাম্মদ আব্দুল বারীরব সনভাপতিত্বে পাবনার আরিচপুর কবরস্থান ময়দানে অনষ্ঠিত সফল কনফান্সে ১৬টি জেলা জমঈয়ত হতে দুইশত পঞ্চাশজন সদস্য নির্বাচিত করে বাংলাদেশে জমঈয়তে আহলে হাদীসের জেনারেল কমিটি এবং ৩২ সদস্য বিশিষ্ঠ কার্যকরী সংসদ গঠন করা হয়।
সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন ড. আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল বারী, সহসভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা সাদ ওয়াক্কাস রাহমানী, মাওলানা শামসুর হক সালাফী এবং ড. মাওলানা আফতাব আহমদ রাহমানী সেই সাথে মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বি. এ.বি. টি জেনারেল সেক্রটারী, মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দীন সহকারী জেনারেল সেক্রেটারী, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাই সালাফী অর্গানাইজিং সেক্রেটারী এবং ২৫ জন কার্যকরী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ কনফারেন্সে ১৯টি সাংগঠনিক জেলা জমঈয়ত ঘোষণা করা হয়।
আশির দশকে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের দাওয়াত ও তাবলীগী তৎপরতা, সাংগঠিনক কর্মকান্ড প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারীর নেতৃত্বে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারী, ১, ২ ও ৩ মার্চ, ১৯৮৫ বৃহস্পতি, শুক্র, ও শনিবার ৩ দিন ব্যাপী আল্লামা প্রফেসর ড.মুহাম্মদ আব্দুল বারী সাহেবের বরিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের পঞ্চম কেন্দ্রেীয় কনফারেন্স রাজধানী ঢাকায় মহাসমরোহে পূর্ণ সাফল্যের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। এ কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রোথিতযশা উলামায়ে দীন ও ইসলামী পন্ডিতগণের মধ্যে যাঁরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের অন্যতম হলেন সাউদী আরব সরকারের রিয়াসাতু ইদারাহ আল বহুস আল ইলমিয়া ওয়াল ইফতা ওয়াদ দাওয়া ওয়াল ইরশাদ, রিয়াদ এর মহা-পরিচালক তাকতীশ শাইখ ইসমাইসল বিন সাদ বিন আতিক, একই বিভাগেই এশিয়া মহাদেশের পরিচালক শাইখ আব্দুর রহমান আল মুহাইয়ান, জেদ্দাস্থ মাদরাসা তাহকীকুল কুরআন আলকারীম এর মহা-পরিচালক মাহমুদ মুহাম্মদ বা-হাযেক, সাউদী আরবের বিশিষ্ট সমাজকর্মী শাইখ আব্দুল্লাহ ওসমান আল হুসাইনী, সর্ব ভারতীয় জমঈয়তে আহলে হাদীসের সহ-সভাপতি এবং জামি’আ মুহাম্মতীয়া মালেগাও বোম্বায় এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আব্দুল কালাম আযাদ ইসলামী পূর্নজাগরণ কেন্দ্রের সভাপতি শাইখ আব্দুল হামীদ রাহমানী, সর্ব ভারতীয় জমঈয়তে হাদিসের শিক্ষা ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারী শাইখ আতাউর রহমান আল মাদানী, পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় জমঈয়তে আহলে হাদিসের সেক্রেটারী জোনারেল হাফিয শাইখ আইনুল বারী, পশ্চিম দিনাজপুর জেলা জমঈয়ত আহলে হাদীসের জেনারেল সেক্রেটারী পাকিস্তান জাতীয় গণপরিষদের সদস্য আল্লামা শাইখ আব্দুর রউফ ঝান্ডানগরী, কুয়েতের পিপলস কমিটির প্রতিনিধি শাইখ খরীল হাবশ প্রমুখ। এছাড়াও বাংলাদেশে নিয়োজিত বিভিন্ন মুসলিম দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তাবৃন্দ কনফারেন্সে যোগদান করেছিলেন।
৫ম কেন্দ্রীয় কনফারেন্সে জমঈয়তের লক্ষ্য ্ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার জন্য নিম্নলিখিত বিভাগসমূহ গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হয়।
১। অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, ২। তা’রীম ও তারবিয়াত ৩। মাসজিদও মাদারিস, ৪। দাওয়াত ও ফাতওয়া, ৫। খেদমতে খালক, ৬। প্রকাশনা, ৭। শুব্বান ও ৮। খাওয়াতীন। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সাংগঠিনক জেলা ১৯ এর স্থলে ৩০টির অনুমোদন দেয় হয় এবং জেনারেল কমিটির সদস্য ২৫০ এর স্থলে ৪১০ জন করা হয়। কার্যকরী সংসদের সদস্য করা হয় ৩৫। এ কনফারেন্স প্রফেসর ড. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল বারী সভাপতি ও আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহহাব (কোষাধক্ষ্য), আলহাজ্ব এডভোকেট মুহাম্মদ আয়েন উদ্দিন ও আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আলী সহ-সভাপতি, মাওলানা মুহাম্মদ মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ সাংগঠনিক সেক্রেটারী, মাওলানা মুহাম্মদ মুসলিম সহসেক্রেটারী, মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম অফিস সেক্রেটারী, সহ মোট ৫০ জন কার্যকরী সংসদের সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণ করা হয়।
Office
4, Nagira Bazar Lean,
Majed Sordar Road,
Dhaka. Bangladesh

No comments:

Post a Comment