পর্দা একটি ইবাদত -Porda Ekti Ebadat

সূচীপত্র
ক্রম শিরোনাম
১ দু’টি কথা
২ পর্দা একটি ইবাদত
৩ কুরআন ও হাদীস থেকে পর্দার দলীলসমূহ
৪ কুরআন থেকে পর্দার দলীল
৫ হাদীস থেকে পর্দার দলীল
৬ কুরআন ও হাদীসে চেহারা আবৃত করার দলীলসমূহ
৭ অজ্ঞতা না এক গুঁয়েমি?
৮ পর্দা ও সভ্যতা
৯ শিক্ষার জন্য, নগ্নতা প্রদর্শনের জন্য নয়
১০ তারা আসলে চায় কী?
১১ পর্দা বিরোধীদের প্রতিবাদ
১২ কতিপয় অমুসলিম দেশে নারী নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান
১৩ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ শিক্ষা গ্রহণ করুন
১৪ শর‘ঈ পর্দা
১৫ যারা শর‘ঈ পর্দা
অবলম্বন করে এবং চেহারা আবৃত করে তাদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিধান
দু’টি কথা
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين..
সম্মানিত
পাঠক/পাঠিকা!
নারীদের
জন্য পর্দা পালন যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত, পুস্তিকাটিতে সংক্ষেপে সুন্দরভাবে
তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে যারা পর্দা সম্পর্কে পুরোপুরি বা আংশিক বিরূপ মনোভাব
রাখে তাদের জন্য এটি একটি দাঁতভাঙ্গা জবাব। সমাজে পর্দা সম্পর্কিত বিভিন্ন
মনোভাবের লোক বিদ্যমান, যার
মধ্যে এক শ্রেণি হলো, তাদের
অজ্ঞতা বা ভুল বুঝার কারণে তারা ধারণা করে যে, নারীদের পর্দা হলো যখন তারা বাড়ী থেকে
শহর-নগরের দিকে বের হবে তখন তারা অপরিচিত ব্যক্তিদের থেকে পর্দা করবে। পক্ষান্তরে
পরিচিত ও আত্মীয় স্বজন বলতে যা বুঝায় তাদের কারো থেকে পর্দা করার প্রয়োজন নেই এবং
তারা এ ধারণাও পোষণ করে থাকে যে, নারীদের
চাচা শ্বশুর, মামা
শ্বশুর, খালু
শ্বশুর, ভাশুর
(স্বামীর বড় ভাই) প্রমুখের সাথে কি কোনো খারাপ ধারণার অবকাশ রয়েছে বা তাদের
ক্ষেত্রে কি কোনো ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে যে তাদের থেকে পর্দা করতে হবে? এ ছাড়া সমাজে দৃষ্টি গোচর হয় যে, নারীদের
মধ্যে যারা বয়োজেষ্ঠা ও বয়োবৃদ্ধা তারাই পর্দা অবলম্বন করেন ও তারাই এর প্রতি শুধু
গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
সম্মানিত
পাঠক!
তবে
কি এগুলোই প্রকৃত ইসলামী পর্দা এবং এটাই কি ইসলামী শরী‘আতে পর্দার দাবী?
এর
উত্তর অনেকের নিকট ষ্পষ্ট, সূরা
আন-নূরের ৩১নং আয়াতে যে সব পুরুষ থেকে পর্দা অপরিহার্য নয়, তার বর্ণনা আল্লাহ দিয়েছেন যা
পুস্তিকার ... পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। এসব ব্যতীত অন্যান্য সকল আত্মীয় ও অপরিচিত
পুরুষদের সাথে পর্দা অপরিহার্য। যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ হারাম নয় বরং ক্ষণস্থায়ী
হারাম। যেমন, ভগ্নিপতি, খালু, ফুপা ও যাদের সাথে বিবাহ বৈধ। যেমন, চাচাত ভাই মামাত ভাই, খালাত ভাই, ফুপাত ভাই, বোনের দেবর ও ভাবীর ভাই প্রভৃতি
আত্মীয় স্বজন থেকেও বাড়ীর অভ্যন্তরে ও বাইরে পর্দা অপরিহার্য। মোটকথা, শরী‘আত যাদের
সাথে চিরতরে বিবাহ হারাম করেছে তারা ব্যতীত সবার সাথে প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলার সকল
স্থানে সব সময় পর্দা করতে হবে। বিশেষ করে সাবালিকা হওয়ার পর থেকে, বিবাহের উপযুক্ততা থাকা অবধি পর্দার
যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। পর্দার বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদেরকে এ ধরণের চিন্তা
করলে চলবে না যে, অমুকের
সাথে তো আর খারাপ ধারণা বা ফিতনার আশঙ্কা করা যায় না অতএব তার সাথে পর্দা জরুরি নয়। কারণ, এই পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়েছিল
সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী, মুসলিমদের জননী ও জান্নাতের
সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গসহ সাহাবীদের প্রতি। তবে কি (নাউযুবিল্লাহ) তাদের মধ্যে
খারাপি ও ফিতনার আশঙ্কা ছিল? মূলকথা
পর্দা করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্ধারিত ফরয, তাই তা পালন করা ইবাদত, অস্বীকার করা কুফুরী ও বেপর্দা হওয়া
হারাম। আর পর্দা পালনে নারী পুরুষ উভয়ে একান্তভাবে আন্তরিক হলেই এ ইবাদত বাস্তবায়ন
সম্ভব।
আল্লাহ
তা‘আলা আমাদেরকে পর্দার গুরুত্ব বুঝার এবং তা পালন
করার তাওফীক দিন। তাঁর নিকট আরো প্রার্থনা যে, তিনি যেন পুস্তিকাটির সংকলক, অনুবাদক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এটিকে
পরকালে সাদকা জারিয়া হিসেবে নেকির পাল্লায় গ্রহণ করেন। আমীন।
وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين
মুহাম্মাদ
আব্দুর রব আফ্ফান
তারিখ, মুহাররাম, ১৪২৪ হি.
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده، أما بعد:
সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য এবং দুরূদ ও সালাম ঐ নবীর
প্রতি বর্ষিত হোক যার পর আর কোনো নবী নেই।
মুসলিম
ভগ্নিগণ!
সাম্প্রতিক
কতিপয় লোক আপনাদের পর্দার বিরুদ্ধে অবিরাম চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং অপপ্রচার
করছে যে, পর্দা
হলো পশ্চাদগামিতা-পশ্চাদমুখীতার কারণ ও উন্নয়নের পথে বড় প্রতিবন্ধক। আমরা বর্তমানে
মহাকাশ বিজ্ঞান, শক্তিশালী
যোগাযোগ মাধ্যম, আধিপত্য
বিস্তার ও বহু ভ্রান্ত মতবাদ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির যুগে বসবাস করছি।
বর্তমান
যুগে পাশ্চাত্য সভ্যতায় আকৃষ্ট হতবুদ্ধির লোকেরা বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত:
তাদের
মধ্যে একশ্রেণি এমন, যারা
পর্দা ফরয হওয়াকে পুরোপুরি অস্বীকার করে,
আর ধারণা পোষণ করে যে,
পর্দা হলো ইসলামের প্রাথমিক যুগসমূহের একটি রীতি।
তাদের
মধ্যে একদল মুখমণ্ডল আবৃত করার বিরুদ্ধে এবং তারা বেপর্দা ও নারী-পুরুষের অবাধ
মেলামেশার সমর্থক। কেননা
তারা মনে করে যে আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
সুন্নাতে নারীর মুখমণ্ডল আবৃত করার কোনো প্রমাণ নেই। তা উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্ত অভ্যাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত যা গোঁড়া উগ্রদের দ্বারা প্রবর্তিত।
তাদের
মধ্যে কেউ এর প্রতি আঘাত হেনে বলে: নিশ্চয় পর্দা প্রথা একটি বন্দিশালা। সুতরাং
নারীদের উচিৎ এ থেকে মুক্ত হয়ে বর্তমান জয়যাত্রার যুগে ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটানো এবং
উন্নতির সারিতে পুরুষের সঙ্গে আধুনিক সভ্যতার পথে অংশগ্রহণ করা।
তাদের
এক শ্রেণি নিম্নোক্ত প্রবাদের বাস্তবরূপ:
“সে আমার ওপর তার নিজের ব্যাধির অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে নিজে তা থেকে পালিয়ে
গেল।”
তারা
ধারণা করে যে, নিশ্চয়
যারা পর্দার প্রতি আহ্বানকারী এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দার বিরোধী তারা
নারীদেরকে শুধু দৈহিক দৃষ্টিতে দেখে থাকে,
পক্ষান্তরে তারা যদি নারীদেরকে তাদের ইখতিয়ারে যা তারা খুশী
তা পরিধানের জন্য ছেড়ে দিত তবে অবশ্যই সমাজ এ সংকীর্ণ মনোভাব থেকে মুক্তি পেত!
উল্লিখিত
সকল প্রকার লোকই অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির পথে আহ্বানের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের, তারা তা স্বীকার করুক বা না করুক।
এ
ব্যাপারটি তো ঠিক তেমনি যেমন আরবী কবি বলেন,
فإن كنت لا تدري فتلك مصيبة
وإن كنت تدري فالمصيبة أعظم
“যদি
তুমি না জান তা একটি বিপদ;
আর যদি জান তবে তা আরো বড় আপদ”।
ঐ
সমস্ত লোকের বাস্তবরূপ, দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন
ব্যক্তির নিকট গোপন নয়।
আর
তাদের বক্তব্য ভ্রান্তই ভ্রান্ত, তার
শুরু-শেষ, শেষ-শুরু, আদ্যোপান্ত সবই ভ্রান্ত, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَتَعۡرِفَنَّهُمۡ
فِي لَحۡنِ ٱلۡقَوۡلِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ أَعۡمَٰلَكُمۡ﴾ [محمد: ٣٠]
“তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদেরকে চিনতে পারবে। আল্লাহ তোমাদের
কর্ম সম্পর্কে অবগত।” [সূরা
মুহাম্মাদ, আয়াত:
৩০]
আর
তাদের এই আহ্বান হলো মুসলিম নারীদের এবং মুসলিম উম্মাহ ও জাতি সমাজের প্রতি একটি
উম্মুক্ত আগ্রাসন।
এ
সত্ত্বেও তারা আমাদের নারীদের বিবেকের ওপর প্রভাব বিস্তারে সফলতা অর্জন করে চলেছে।
সুতরাং তারা তাদের মধুময় বক্তব্য ও চমকপ্রদ কথায় তাদেরকে ধোকায় পতিত করে ধ্বংস ও
বিনাশের পথে নিয়ে গেছে। অথচ তারা ধারণা করে যে, ঐ সমস্ত লোকেরাই নারী সমস্যা সমাধান ও
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। এটি তাদের একান্ত অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই
নয়। কেননা ইসলামই নারীদেরকে পুরোপুরি
সংরক্ষণ করে এবং তাদের বাল্য, কন্যা, সহধর্মীনী ও দাদী-নানী হিসেবে সার্বিক
জীবনে তাদের অবস্থান বুলন্দ করেছে।
আর
তাদের ব্যাপার তো ঠিক সেরূপ যেমন কবি বলেন,
لكل ساقطة في الحي لاقطة
وكل كاسدة يوماً لها سوق
“মহল্লায়
প্রত্যেক বর্জিত বস্তুরই কোন টোকাই রয়েছে, প্রত্যেক চাহিদাহীন বস্তুও একদিন
মার্কেট পেয়ে বসে।”
(তাই এ ধরণের লোকজনের শ্লোগান ভ্রান্ত
হলেও বর্জিত ও চাহিদাহীন বস্তুর মতো এক সময় মার্কেট পেয়ে যায়)
ঐ সমস্ত লোকের জবাব আশা করি যথেষ্ট হয়েছে। তাদের সংশয় খণ্ডিত
হয়েছে, তাদের
বক্তব্য মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে, তাদের
কথার গোপনীয়তা ফাঁস হয়েছে, তাদের
গবেষণা জাল প্রমাণিত হয়েছে। অতএব,
আশা করা যায় যে,
তারা সৎপথে ফিরে আসবে এবং ভ্রান্ততা বর্জন করবে।!!!!
পর্দা একটি ইবাদত
পর্দা
শ্রেষ্ঠ ইবাদত ও গুরুত্বপূর্ণ ফরযসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে নিষেধ করে পর্দার আদেশ দেন, তেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদীসে বেপর্দার নিষেধাজ্ঞা জারি করে পর্দার আদেশ জারি করেন।
পর্দা
ফরযের ব্যাপারে পূর্বের ও বর্তমানের আলিমগণ একমত। তাদের মধ্যে কেউ এর বিপক্ষে যান
নি। সুতরাং পর্দা ইবাদতকে কোনো এক যুগের সাথে নির্ধারিত করতে হলে অবশ্যই তার জন্য
দলীল-প্রমাণ প্রয়োজন কিন্তু এর দাবিদারদের নিকট এর কোনই দলীল নেই। অতএব আমরা বলব, বার বার বলব: পর্দা কোনো অভিনব বিষয়
নয়। বরং তা পূর্বে ছিল এখনও থাকবে।
কুরআন ও হাদীসে যদি পর্দার কোনো নির্দেশ ও এর আদর্শ ও
সৌন্দর্য-বৈশিষ্টের ব্যাপারে কোনো শরী‘আতের দলীল নাও থাকত
তবুও পর্দা মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে নারী তা পালন ও সংরক্ষনের
জন্য প্রশংসার দাবীদার হতো। যেহেতু পর্দার বিধান কুরআন, হাদীস ও ইজমার দ্বারা সুসাব্যস্ত তাই
এর গুরুত্বও অপরিসীম।!!!!
কুরাআন ও হাদীস থেকে পর্দার দলীল
নিম্নে বর্ণিত দীললসমূহ পর্দা ফরযের উজ্জল প্রমাণ এবং যারা
মনে করে যে, পর্দা
একটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অভ্যাস বা ইসলামের প্রাথমিক যুগের জন্যই মানানসই
ছিল, তাদের
জন্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব।
প্রথমত:
করআন থেকে দলীল:
প্রথম
দলীল: আল্লাহ
তা‘আলার বাণী:
﴿وَقُل
لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا
يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ
عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ
ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ
أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ
بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ
ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ
ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ
بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى
ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“(হে নবী!) ঈমানদার নারীদেরকে বল: তারা
যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, তারা যেন যা সাধারণত; প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের শোভা
প্রদর্শন না করে, তাদের
গলদেশ ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা (দাদা-নানাসহ), শশুর (দাদা শশুর-নানা শশুরসহ), পুত্র (ও নাতি), স্বামীর পুত্র (নাতিসহ), ভাই (সহোদর ও সৎভাই), ভাতিজা, ভাগ্নে, আপন (মুসলিম) নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাস- দাসী, এমন অধিনস্থ পুরুষ যাদের মধ্যে
পৌরুষত্ব বিলুপ্ত এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট
তাদের শোভা প্রকাশ না করে। তারা যেন সজোরে পদক্ষেপ না নেয় যাতে তাদের গোপন শোভা
প্রকাশ পায়। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর যাতে তোমরা
সফলকাম হতে পারো। [সূরা আন-নূর, আয়াত:
৩১]
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহ
প্রথম পর্যায়ের হিজরতকারী মহিলাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন: যখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন:
﴿وَلۡيَضۡرِبۡنَ
بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ﴾ [النور: ٣١]
“(তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড়
দ্বারা আবৃত করে) সাথে সাথে তারা স্বীয় চাদরসমূহ চিরে টুকরা করে তা দ্বারা আবৃত
করেন।” (সহীহ
বুখারী)
দ্বিতীয়
দলীল: আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلۡقَوَٰعِدُ
مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ
أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ وَأَن
يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٦٠﴾ [النور: ٦٠]
“আর এমন বৃদ্ধ নারীগণ যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য দোষ নেই যদি তারা তাদের
শোভা প্রদর্শন না করে তাদের (বাহ্যিক অতিরিক্ত চাদর উড়না) বস্ত্র খুলে রাখে, তবে সংযমী হয়ে বিরত থাকলে তা তাদের
জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬০]
তৃতীয়
দলীল: আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ
قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ
مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ
ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের উড়না বা চাদরের কিছু
অংশ নিজেদের (চেহারা ও বুকের) উপর টেনে দেয়,
এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, (বুঝা যাবে যে তারা স্বাধীন ও
সম্ভ্রান্ত) ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
চতুর্থ
দলীল: আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي
بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে, প্রাচীন জাহেলী যুগের মতো তোমরা
সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
পঞ্চম দলীল: আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿فَسَۡٔلُوهُنَّ
مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“আর যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে পর্দার
অন্তরাল থেকে চাইবে, এ
বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
দ্বিতীয়তঃ
হাদীস থেকে পর্দার দলীল:
প্রথম
দলীল: সহীহ
বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার স্ত্রীদেরকে
পর্দা করতে বলুন, আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর
আল্লাহ পর্দার আয়াত অবতীর্ণ করেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এ বর্ণনাও রয়েছে যে, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, যদি আপনি মুমিনদের জননীদেরকে পর্দার
আদেশ দিতেন; এরপর
আল্লাহ পর্দার আয়াত অবতীর্ণ করেন।
দ্বিতীয়
দলীল: ইবন
মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে
বলেন, “নারীরা
হলো গোপনীয় বস্তু।” (তিরমিযী
এবং এটিকে আলাবনী সহীহ বলেছেন)
তৃতীয় দলীল: ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ স্বীয় কাপড় টাখনুর নিচে রাখলো কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে
দৃষ্টিপাত করবেন না। অতঃপর উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তবে মহিলারা তাদের নিম্নাংশের ঝালরের
ব্যাপারে কী করবে? তিনি
বলেন, এক বিঘত
(গোছার নিচে) ঝুলিয়ে দিবে, উম্মে
সালামা বলেন, তবে এতে
তাদের পা বেরিয়ে থাকবে, তিনি
বলেন, তবে
তা (গোছার নিচে) এক হাত ঝুলিয়ে দিবে এর বেশি করবে না।” (আবু দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান-সহীহ)।
কুরআন ও হাদীসে চেহারা আবৃত করা দলীলসমূহ
প্রথমত: আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿وَلۡيَضۡرِبۡنَ
بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ﴾ [النور: ٣١]
“তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (ওড়না বা চাদর) দ্বারা আবৃত করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লামা
ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, (আয়াতে বর্ণিত) খিমার হলো: যার দ্বারা
মহিলা ঘোমটা দিয়ে স্বীয় মাথা আবৃত করে থাকে।
সুতরাং মহিলা যেহেতু চাদর বা ওড়না দ্বারা তার বক্ষদেশ আবৃত করার
জন্য আদিষ্ট, অতএব সে
তার চেহারা আবৃত করার জন্যও আদিষ্ট।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর
বাণী:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا
ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ
عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল:
তারা যেন তাদের ওড়না বা চাদরের কিছু অংশ নিজেদের (চেহারা ও বুকের) উপর টেনে দেয়।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ
মুমিন মহিলাদেরকে আদেশ করেন যে, যখন
তারা স্বীয় গৃহ থেকে কোনো প্রয়োজনে বের হবে তারা যেন চাদর বা ওড়না মাথার উপর দিয়ে
(ঝুলিয়ে) তাদের চেহারা আবৃত করে।
শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সাহাবীর তাফসীর দলীল হিসেবে
গণ্য, বরং
কতিপয় আলিম বলেন, তা
নবী পর্যন্ত উন্নীত (মারফু‘)।
তৃতীয়ত: ইবন
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইহরামরত মহিলা
নিকাব (মুখাচ্ছাদন) ও হাত মোজা পরবে না।” (সহীহ বুখারী)
কাজী
আবূ বকর ইবন আল আরাবী বলেন, ইবন
উমার এর হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: ইহরামরত মহিলা নেকাব
পরবে না, আর তা
এটাই বুঝায় যে, হজ্জ
ব্যতীত অন্য সময় চেহারা আবৃত করা ফরয। সুতরাং সে ইহরাম অবস্থায় চেহারার সাথে লাগিয়ে না রেখে তার
উপর চাদর বা ওড়নার এক অংশ ঝুলিয়ে দিবে
এবং সে পুরুষ থেকে বিমুখ থাকবে পুরুষরাও তার থেকে বিমুখ থাকবে।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ বলেন, সুতরাং এটি প্রমাণ করে যে নেকাব
ও হাত মোজা ইহরামমুক্ত মহিলাদের নিকট সুপরিচিত বিষয় এবং তার দাবীই হলো মহিলাদের
চেহারা ও হাত আবৃত করা।
চতুর্থত: নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “নারী হলো গোপনীয়
বস্তু” এটি
চেহারা আবৃত করার বিধিবদ্ধতার একটি দলীল।
শাইখ হামূদ আত-তুয়াইজিরী বলেন, এই হাদীসটি নারীর সমস্ত
অঙ্গ-প্রতঙ্গ পর পুরুষের জন্য গোপনীয় বস্তু হওয়ার নির্ভরযোগ্য দলীল। চাই তা তার
চেহারা হোক বা অন্য কোনো অঙ্গ হোক।
অজ্ঞতা না একগুঁয়েমি?
ওহে
যারা ধারণা করে যে, বর্তমান
যুগে পর্দা করা মুসলিম নারীদের জন্য উপযোগী নয়, তারা শ্রবণ করুন!
ওহে
যারা দাবী করেন যে, চেহারা
আবৃত করা হলো উসমানী যুগের অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত।
ওহে
যারা নারীদেরকে তাদের গৃহ থেকে বের করে সর্বক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে অবাধ মিশ্রণ
ঘটাতে চান।
উল্লিখিত
আয়াতসমূহ আপনার সামনে। অতএব, সেগুলো
পড়ুন। উল্লিখিত হাদীসসমূহ আপনার সামনে। সেগুলো গবেষণা করুন। আর যে সমস্ত পূর্বাপর
ইসলামী মনিষীদের মতামত অতিবাহিত হলো তা পর্দা ও চেহারা আবৃত করারই প্রমাণ বহন করে, সেগুলোও বুঝুন। সুতরাং আপনারা যদি
ইতোপূর্বে এ সমস্ত আয়াত ও হাদীস সম্পর্কে অবহিত না হয়ে থাকেন, তবে এখন এসব আপনাদের সন্মুখে। আপনারা
ভ্রান্তিতে অব্যাহত না থেকে মহাসত্যের দিকে ফিরে আসুন, আমরা সে অপেক্ষায় রয়েছি। কেননা সত্যের
পথে প্রত্যাবর্তন হলো শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা এবং ভ্রান্তি ও বাতিলে অব্যাহত থাকা
হলো নিকৃষ্ট ও জঘণ্যতম অসম্মান।
পক্ষান্তরে
আপনারা যদি মহান আল্লাহর বাণী:
﴿وَجَحَدُواْ
بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ﴾ [النمل: ١٤]
“তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করলো যদিও তাদের
অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]-এর মধ্যে যে শ্রেণির গুণ
বর্ণিত হয়েছে, তার
অন্তর্ভুক্ত হন তবে অবশ্যই আপনারা কখনও সত্য গ্রহণ করতে পারবেন না। অবশ্যই সঠিক
মতে পৌঁছতে পারবেন না যদিও আপনাদের নিকট উপস্থাপন করি হাজারো আয়াত ও হাদীস। কেননা
ইসলামে যে সার্বিক জীবনের আদর্শ রয়েছে এবং কুরআন যে সর্বকালের ও সর্বস্থানের জন্য
আদর্শ তা আপনারা প্রকৃতভাবে বিশ্বাস করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَحُكۡمَ
ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ
يُوقِنُونَ ٥٠ ﴾ [المائدة: ٥٠]
“তবে কি তারা জাহেলিয়াত-বর্বরতার বিচার-মীমাংসা
কামনা করে? আর
দৃঢ় বিশ্বাসীদের কাছে বিচার-মীমাংসা কার্যে আল্লাহর চেয়ে কে উত্তম হবে?” [সূরা
আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৫০]
পর্দা ও সভ্যতা
সভ্যতার
দাবীদারগণ পর্দাকে অবনতির কারণ ও মহিলাদের উদ্ভাবন ও উন্নতির প্রতিবন্ধক মনে করে
এবং তাদের মতে, পর্দা
এমন মারাত্মক প্রতিবন্ধক যা মহিলাদের জন্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বড় বাধা এবং তা
উন্নয়নশীল দেশগুলো সভ্যতার যে অগ্রগতিতে পৌঁছেছে সে অগ্রগতিরও বড় বাধা।
ঐ
সমস্ত ব্যক্তিকে আমরা বলব: আধুনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ও প্রযুক্তির সাথে
পর্দার কি সম্পর্ক রয়েছে?
তবে
কি উন্নয়ন, সভ্যতা
ও সংস্কৃতির জন্য নারীদেরকে স্বীয় পোষাক বর্জন করে পুরুষদের সামনে উলঙ্গ হওয়া শর্ত? তবে কি উন্নয়ন ও সভ্যতা-
সংস্কৃতির জন্য নারীদেরকে পুরুষদের সাথে তার পাশবিক সম্ভোগ ও পশুত্বের প্রবৃত্তি
নিবৃত্ত করার জন্য অংশগ্রহণ শর্ত?
আধুনিকতা
ও সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য কি এটা শর্ত যে,
নারীর শুধু বাহ্যিকভাবে দেহ থাকবে, থাকবে না তার আত্মিক সম্ভ্রম, আর না থাকবে তার আত্মমর্যাদা?
পর্দা
কি আমাদের গাড়ী, উড়োজাহাজ, ট্যাংক এবং সব
ধরণের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের অপারগতার কারণ?
ইতোপূর্বেই
অধিকাংশ আরব ইসলামী দেশগুলোর মহিলারা পর্দা বর্জন করে নগ্নতা গ্রহণ করেছে, পর্দাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতঃ পদদলিত
করে পুরুষদের সাথে কর্মের জন্য বেরিয়ে পড়েছে এবং তাদের সাথে অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে
তারা জড়িয়ে গেছে। কিন্তু সেসব দেশের নারীদের পর্দা থেকে নগ্নতা গ্রহণের ফলে কি
তারা উন্নতি করে ফেলেছে?
তারা
কি নারী- পুরুষের সংমিশ্রনের কারণে সভ্যতা,
সংস্কৃতি ও উন্নতির উচ্চশক্তি ও উন্নতির উচ্চশিখরে আরোহণ করেছে? উন্নয়ণশীল দেশসমূহ যে শক্তি ও
উন্নতিতে পৌঁছেছে তারা কি সে অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছে? যাদের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর অধিকার
রয়েছে, সেই
বৃহৎ পরাশক্তিধর দেশসমূহের অন্তর্ভুক্ত কি তারা হতে পেরেছে? তারা কি অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক, সামাজিক ও চারিত্রিক সমস্যাবলী থেকে
মুক্তি পেয়েছে?
সবগুলোর উত্তর ষ্পষ্ট,
ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। সুতরাং হে সভ্যতা ও সংস্কৃতির
আহ্বানকারীগণ! আপনারা বেপর্দা, নগ্নতা
ও সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করেন কেন?
শিক্ষার জন্য, নগ্নতা প্রদর্শনের জন্য নয়
প্রিয়
পাঠক! আল্লাহর শত প্রশংসা, সাউদী
আরবে মহিলারা আজ শিক্ষা-দিক্ষার সর্বোচ্চ স্থান দখল করেছে, অর্জন করে চলেছে সর্বোচ্চ ডিগ্রি।
নারীরা তাদের উপযোগী বহু ক্ষেত্রে কর্মে নিয়োজিত। যেমন, সেখানে তারা ডাক্তার, শিক্ষিকা, পরিচালিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা, তত্ত্বাবধায়ক ও গবেষক। আর প্রত্যেকে
তারা জাতির উন্নতি ও জাতির নব প্রজন্ম গঠনের লক্ষে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
তাদের
পর্দা, লজ্জা ও
সংযমশীলতা তো সেগুলো থেকে তাদেরকে বিরত রাখে না?
সৌদী
আরবের মুসলিম মহিলারা প্রমাণ করেছে যে,
অন্যান্য দেশের মহিলাদের মত নিজেদের প্রদর্শন, উপস্থাপন, বেপর্দা, পরপুরুষদের সাথে সংমিশ্রণ ও নিজেদেরকে
বিলিয়ে না দিয়ে নিজেদের সমাজ ও জাতির সেবা করা যায়।
এই
বাস্তবতার প্রতিফলনের মাধ্যমে মহিলারা এ দেশে সমাধিকার, অবাধ মেলামেশা ও অবাধ সৌন্দর্য
প্রদর্শনের দাবীদারদের দাবীর ভ্রান্ততা প্রমাণ করে, যেমন উক্ত দাবীদারদের দাবী হলো: “আমাদের দেশের নারী সমাজ একটি আবদ্ধ শক্তি, এদের পর্দা উম্মোচন এবং তাদেরকে
পুরুষদের কর্মস্থলে অবাধ বিচরণের সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত এদের দ্বারা উপকৃত হওয়া
সম্ভব নয়।”
এদের
সম্পর্কে মহান আল্লাহর মহাসত্য বাণী:
﴿كَبُرَتۡ
كَلِمَةٗ تَخۡرُجُ مِنۡ أَفۡوَٰهِهِمۡۚ إِن يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبٗا﴾ [الكهف: ٥]
“তাদের মুখনিসৃত কথা নিকৃষ্ট কথা, তারা তো শুধু মিথ্যাই বলে।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৫]!!!!!
তারা আসলে কী চায়?
তারা প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে সভ্যতা-সংস্কৃতি, উন্নতি ও অগ্রগতি চায় না। তারা চায়
মহিলারা যেন তাদের সাহচর্যে বা নিকটে হোক,
চায় তারা যেন তাদের কু-প্রবৃত্তি নিবৃত্তির জন্য উন্মুক্ত
ভোগের বস্তুতে পরিণত হোক। চায় পৈশাচিক যৌনাচারের লক্ষ্যে উন্মুক্ত সামগ্রী হিসেবে
পেতে, যখন
ইচ্ছা তখন তাদের সাথে খেল-তামাশায় লিপ্ত থাকতে। তাদের দ্বারা অপকর্মের ব্যবসা
চালাতে, চায়
তারা এমন মহিলা যার থাকবে না কোনো লজ্জা,
থাকবে না কোনো নিস্কলুষতাবোধ, যারা হবে পশ্চাত্যের চিন্তা-চেতনা ও
লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বাস্তব রূপকার। তারা হবে নৃত্য-নাচে সার্বিক পারদর্শী, অভিনয় ও নাচে গানে পারদর্শী এবং চায়
যে তারা হবে চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-বিশ্বাস, চরিত্র ও মর্যাদাবোধে স্বাধীন। যা
ইচ্ছা তা করে বেড়াবে।
পর্দা বিরোধী প্রতিবাদ
হ্যাঁ, পর্দার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ও
বিরোধীদের অভিযোগ সম্পর্কে বলতে থাকুন,
এতে কোনো দোষ নেই .. .. .. .. .. তারা অবশ্য মিথ্যারোপ করে, আর তারা নিজেরাও অবগত যে তারা অবশ্যই
মিথ্যাবাদী ..। তারা বলে: এই মর্যাদার (পর্দার) দিকে আহ্বানকারীগণ নারীদেরকে শুধু
দৈহিক দৃষ্টিকোণে প্রত্যক্ষ করে থাকে;
পক্ষান্তরে নারীদেরকে যদি স্বাধীনতা দেওয়া যায় অর্থাৎ তারা
যা খুশি তা পরিধান করবে, তবে
দেখা যাবে তাদের প্রতি আর উক্ত দৃষ্টিবোধ থাকবে না এবং অচিরেই নারী-পুরুষের মধ্যে
পর্যায়ক্রমে পারস্পরিক মর্যাদাবোধের ভিত্তি গড়ে উঠবে।
বাস্তবে
বিনাতর্কেই বলা যায় যে, এটি
একটি মিথ্যা দাবী ও ভ্রান্ত কথা। কেননা এর মিথ্যা ও ভ্রান্ততার পিছনে প্রমাণ হলো, বর্তমানে যে সমাজের মহিলারা যা খুশী
তা পরিধান করে এবং যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে চলাফেরা করার ফলে যা কিছু ঘটে
চলেছে......এর ফলে এ সমস্ত সমাজের যৌনকামনা-বাসনা কি হ্রাস পেয়েছে?
নারী-পুরুষের
পারস্পরিক ব্যবহার এ সমাজে ক্রমান্বয়ে কি মর্যাদার ভিত্তিতে হয়ে চলেছে?
এ
ক্ষেত্রে নিম্নের পরিসংখ্যানের প্রতি লক্ষ্য করা অপরিহার্য।
কতিপয় অমুসলিম দেশে নারী নির্যাতনের একটি
পরিসংখ্যান
১।
এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রে
(১৯০০০০০০) এক কোটি নব্বই লক্ষ মহিলা ধর্ষণের শিকার। (সূত্র: “আজ আমেরিকা বাস্তবতাকে স্বীকার করেছে” নামক গ্রন্থ)
২।
ইতালীর মানসিক চিকিৎসা ফেডারেশন এক জরিপ প্রকাশ করে তাতে স্বীকার করেছে যে, ৭০% ইতালিয়ান পুরুষ স্বীয় স্ত্রীদের
অধিকার খর্ব করে চলেছে। (অর্থাৎ তারা অন্যত্র গমন করে থাকে) (মুসলিমের
ধ্যান-ধারণা)
৩।
আমেরিকায় প্রতি বছর ১ মিলিয়ন (দশলক্ষ) অবৈধ সন্তান ভুমিষ্ট হয় এবং ১ মিলিয়ন অকালে
গর্ভপাত করানো হয়। (মানদণ্ডে নারীর কর্মকাণ্ড)
৪।
কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জনমত জরিপে প্রকাশ, ৭০% নগর সেবিকা যৌন নির্যাতনের শিকার
হয় এবং তাদের মধ্যে ৫৬% ভয়াবহ দৈহিক নির্যাতনের শিকার। (পতনের পর নারীর কি
অবস্থা।)
৫। শুধুমাত্র
জার্মানিতে বছরে ৩৫০০০
(পঁয়ত্রিশ হাজার) নারী ধর্ষনের শিকার হয়। আর এ সংখ্যা হলো শুধু পুলিশের নিকট যা
রেজিস্ট্রিকৃত।পক্ষান্তরে ধর্ষনের যে সব ঘটনা রেজিষ্ট্রি হয় না তার সংখ্যা
ফৌজদারী পুলিশের মতে উক্ত সংখ্যার পাঁচগুণ হবে। (হাওয়ার প্রতি একটি পত্র)
উক্ত
জরিপ ও উক্ত পরিসংখ্যান কি ঐ লোকদের শ্লোগান ও দাবীর ভ্রান্ততা প্রমাণ করে না? ( অর্থাৎ যারা বলে থাকে যে নারীকে যদি
অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ দেওয়া হতো তবে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ত ও নারীর প্রতি
নিপীড়ন কমে যেতো)
না কি উক্ত জরিপ ও পরিসংখ্যান নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি
তারা যা কামনা করে সে ধরণের মর্যাদাবোধের একটি অংশ?!!!!
সুতরাং
হে অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ শিক্ষা গ্রহণ করুন!
হে
মুসলিম নারী!
পর্দা
নারীর ইজ্জত-সম্মান ও লজ্জা সম্ভ্রম সংরক্ষণের সব চেয়ে বড় উপায়। পর্দা
নারীকে অশ্লীল, কদর্য ও
কুদৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রাখে। যারা বেপর্দা ও নগ্ন স্বাধীনতার তিক্ততার আস্বাদ
গ্রহণ করেছে এবং যারা অশ্লীলতা ও অবাধ মেলামেশার আগুনে দগ্ধ হয়েছে তারা এর
স্বীকৃতি দেয়।
ইসলামের
শত্রুরাও কতইনা সত্য সাক্ষ্য দেয়:
“হীলসীয়ান স্তাসমারী” নামক
আমেরিকার একজন মহিলা সাংবাদিক আরব দেশসমূহের কোনো এক রাজধানীতে কয়েক সপ্তাহ
অতিবাহিত করে স্বীয় দেশে ফিরে গিয়ে বলেন, “নিশ্চয় আরব সমাজ ব্যবস্থা একটি পুর্ণাঙ্গ ও নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা। এ
উপযুক্ত সমাজের রীতি-নীতি একান্তভাবে গ্রহণ করা উচিৎ, কেননা এই যুক্তিসংগত প্রথা
যুবক-যুবতীদেরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে।
এ
সমাজ ইউরোপীয় ও আমেরিকার সমাজ ব্যবস্থা থেকে ভিন্নতর। তোমাদের নিকট উত্তরাধিকার
সূত্রে প্রাপ্ত যে চরিত্র রয়েছে তা নারীর সীমাবদ্ধতাকে বাধ্যতামূলক করে, পিতা-মাতার সম্মান করা ও এ ধরনের বহু
বিষয়কে আবশ্যক করে এবং পাশ্চাত্যের সেই স্বেচ্ছাচারিতাকে বর্জন করে, যা বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার সমাজ ও
পরিবারকে বিনাশ করে ফেলেছে।
সুতরাং
অবাধ মেলামেশা থেকে বিরত থাকুন, নারী
স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করুন, ফিরে
আসুন পর্দার যুগে; কেননা
আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান স্বেচ্ছাচারিতা,
অশ্লীলতা ও অবাধ্যতার চেয়ে তা কল্যাণকর।” (“নারী ও শত্রু
চক্রান্ত” নামক
প্রবন্ধ থেকে গৃহীত।)
অতএব, হে মুসলিম নারীবৃন্দ!
লক্ষ্য
করুন! ইনি একজন আমেরিকান মহিলা তিনি তার সমাজের পরিবারসমূহে চারিত্রিক অবক্ষয়
লক্ষ্য করে পর্দার প্রতি আহ্বান করেছেন।
একজন
আমেরিকান মহিলা আমাদেরকে আমাদের ইসলামী সুন্দর চরিত্র ও উত্তম আদর্শ গ্রহণ করার
অসীয়ত করেছেন।
একজন
আমেরিকান নারী আমাদেরকে অবাধ মেলামেশা ও স্বেচ্ছাচারিতার ভয়াবহ পরিণাম থেকে সতর্ক
করছেন, যা
আমেরিকা ও ইউরোপের সামাজিক অবস্থাকে ভেঙ্গে চুড়ে খানখান করেছে।
পরিশেষে
হে মুসলিম নারী! শুভ সংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি আপনার পর্দায় তৃপ্ত হয়ে চক্ষুশীতল করুন
এবং জেনে রাখুন ভবিষ্যৎ শান্তি তো এ জীবন বিধানের জন্যই, আর শেষ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যই, যদিও তা অপছন্দকারীরা অপছন্দ করে।
وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.
অনুবাদকের
পরিশিষ্ট
শর‘ঈ
পর্দা
প্রশ্নঃ শর‘ঈ পর্দা কী?
উত্তরঃ পর্দা
হলো, মহিলাদের
যা প্রকাশ করা হারাম তা আবৃত করা অর্থাৎ যা তাদের জন্য ঢাকা অপরিহার্য ও উত্তম তা
আবৃত করা। সেগুলোর মধ্যে প্রধান হলো চেহারা-মুখমণ্ডল আবৃত করা; কেননা চেহারাই হলো ফিতনার ও আকাঙ্খার
মূল স্থান। সুতরাং যে সমস্ত পুরুষ মহিলাদের জন্য মাহরাম (চিরস্থায়ীভাবে হারামকৃত)
নয় তাদের থেকে চেহারা আবৃত করা অপরিহার্য। পক্ষান্তরে অনেকে ধারণা করে যে, প্রকৃতপক্ষে মহিলাদের শর‘ঈ পর্দা হলো: মাথা,
ঘাড়, সিনা, পা, গোছা ও হাত আবৃত করা কিন্তু চেহারা ও
হাতের পাঞ্জা খোলা রাখা বৈধ। এটি অতি আশ্চর্য কথা, কেননা সর্বজনবিদিত যে, আকাঙ্খা-কামনা ও ফিতনার
অঙ্গই হলো চেহারা ।
অতএব, কীভাবে তা বলা সম্ভব যে শরী‘আত মহিলাদের পা বের করতে নিষেধ করে আর তাদেরকে চেহারা প্রদর্শনের বৈধতা
দেয়? এই
পাক-পবিত্র পরিপূর্ণ মহান শরী‘আতে স্ববিরোধী নীতি
প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব। প্রত্যেক ব্যক্তি অবগত রয়েছে যে, পা খোলা রাখার চেয়ে চেহারা খোলার
মধ্যে রয়েছে ফিতনা অনেক গুণ বেশি। প্রত্যেক ব্যক্তি এটাও অবগত রয়েছে যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে পুরুষদের আকাঙ্খা ও
আগ্রহের অংগই হলো চেহারা। আর এজন্যই যদি বিবাহের প্রস্তাবদানকারীকে বলা হয় যে, তুমি যে মহিলাকে প্রস্তাব দিয়েছ সে
কুৎসিত চেহারার কিন্তু তার পা খুব সুন্দর,
তবে সে তার প্রস্তাবে আর অগ্রসর হবে না। তবে যদি তাকে বলা হয়
সে অত্যন্ত সুন্দর চেহারার কিন্তু তার দু’ হাত বা দুই পাঞ্জা বা দুই পা বা দুই
গোছা সুন্দর নয়, তবুও সে
তার দিকে অগ্রসর হবে।
সুতরাং
এ থেকে বুঝা গেল যে, যা
কিছু পর্দার অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য তার মধ্যে চেহারাই হলো অগ্রাধিকার প্রাপ্ত।
এ ছাড়াও এ ক্ষেত্রে কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ,
সাহাবীদের বাণী,
ইমামগণ ও আলিমদের বাণী থেকে বহু দলীল রয়েছে যা প্রমাণ করে যে
মহিলাদের যারা ‘মাহরাম’ (যাদের সাথে বিবাহ চিরতরে হারাম নয়) নয়
তাদের থেকে পর্দা করা অপরিহার্য..।
“শাইখ ইবন উসাইমীন”
যারা শর‘ঈ পর্দা অবলম্বন করে
এবং চেহারা আবৃত করে তাদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিধান
প্রশ্নঃ যে
ব্যক্তি শর‘ঈ পর্দা অবলম্বনকারী এবং চেহারা ও হাতের পাঞ্জা
আবৃতকারী মহিলাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তার বিধান কী?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম নারী বা পুরুষকে ইসলামী শরী‘আত আঁকড়ে ধরার কারণে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে সে
কাফির। চাই তা শর‘ঈ পর্দা অবলম্বন করার ক্ষেত্রে হোক বা
অন্য কোনো ক্ষেত্রে। কেননা আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, তাবুক যুদ্ধে এক মজলিশে এক ব্যক্তি বলে: আমাদের এ সমস্ত ক্বারীদের
মতো পেটুক, অধিক মিথ্যাবাদী ও যুদ্ধে অধিক ভিরু দেখি নি, অতঃপর এক ব্যক্তি বলে: তুমি মিথ্যা বলেছ বরং তুমি একজন মুনাফিক, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামকে জানিয়ে
দিব, অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জানিয়ে দেয়, তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। এরপর আব্দুল্লাহ ইবন উমার বলেন, আমি তাকে পাথরে ভর করে রাসূলুল্লাহর উটের বেল্টের সাথে ঝুলা
অবস্থায় বলতে দেখি: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা শুধু খেল-তামশায় ও
ঠাট্টা-বিদ্রূপে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম আর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম (আল্লাহর
বাণী) পড়ছিলেন:
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ
تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ إِن
نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ
مُجۡرِمِينَ ٦٦﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]
“তুমি বলে দাও তবে কি তোমরা আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং রাসূলের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিলে? তোমরা আর ওজর পেশ করো না তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছো, যদিও আমি তোমাদের মধ্য হতে কতককে ক্ষমা করে দেই কতককে শাস্তি দিবই, কারণ তারা অপরাধী।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬] সুতরাং তাদের
দ্বারা মুমিনদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপকে আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমূহ ও রাসূলের সাথে
ঠাট্টা-বিদ্রূপ ধরা হয়েছে। আর আল্লাহই হচ্ছেন তাওফীক দাতা। (ফাতাওয়া স্থায়ী কমিটি, সাউদী আরব)।
এ গ্রন্থে লেখক কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিভিন্ন দলীল পেশ করে
পর্দার বিধান বাধ্যতামূলক হওয়া সাব্যস্ত করেছেন। গ্রন্থের শেষে পর্দা ও শর‘ঈ পোষাক নিয়ে যারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তাদের
বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
মাদারুল ওয়াত্বান, শিক্ষা বিভাগ
অনুবাদ: মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্ফান
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ
No comments:
Post a Comment