''ঈদে মিলাদুন্নবী''শিয়াদের থেকে আমদানী করা হয়েছে।
যা জঘন্য বেদআত
দুই ঈদের বাইরে কোনো দিনকে সামাজিকভাবে উদযাপন শুরু হয় হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শিয়াদের উদ্যোগে।
সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরীতে (৯৬৩ খ্রি.) বাগদাদের আব্বাসী খলিফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনী বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজ্জুদ্দৌলা ১০ই মহররম আশুরাকে শোক দিবস ও জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখ “গাদীর খুম” দিবস ঈদ ও উৎসব দিবস হিসাবে পালন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে এই দুই দিবস সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। যদিও শুধুমাত্র শিয়ারাই এই দুই দিবস পালনে অংশগ্রহণ করেন, তবুও তা সামাজিকরূপ গ্রহণ করে। কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রথম বছরে এই উদযাপনে বাধা দিতে পারেননি। পরবর্তী যুগে যতদিন শিয়াদের প্রতিপত্তি ছিল এই দুই দিবস উদযাপন করা হয়, যদিও তা মাঝে মাঝে শিয়া-সুন্নী ভয়ঙ্কর সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
[ইবন কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/৬৪২,৬৫৩]
.
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করার ক্ষেত্রেও শিয়াগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উবাইদ বংশের রাফেযী ইসমাঈলী শিয়াগণ ফাতেমী বংশের নামে আফ্রিকার উত্তরাংশে রাজত্ব স্থাপন করে। ৩৫৮ হিজরীতে (৯৬৯ খ্রি.) তারা মিশর দখল করে তাকে ফাতেমী রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলে এবং পরবর্তী ২ শতাব্দীরও অধিককাল মিশরে তাদের শাসন ও কর্তৃত্ব বজায় থাকে। গাজী সালাহুদ্দীন আইউবী(র)এর মিশরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মাধ্যমে ৫৬৭ হিজরীতে (১১৭২ খ্রি.) মিশরের ফাতেমী শিয়া রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে।
[বিস্তারিত দেখুনঃ মাহমুদ শাকির, আত তারিখুল ইসলাম ৬/১১১-১১২]
এই দুই শতাব্দীর শাসনকালে মিশরের ইসমাঈলী শিয়া শাসকগণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২ ঈদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিন পালন করত, তন্মধ্যে অধিকাংশই ছিল জন্মদিন। তারা অত্যন্ত আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৭টি জন্মদিন পালন করত :
১। রাসুলে আকরাম(সঃ)এর জন্মদিন, ২।আলী (রা) এর জন্মদিন, ৩।ফাতিমা(রা) এর জন্মদিন, ৪।হাসান (রা)এর জন্মদিন, ৫।হুসাইন(রা) এর জন্মদিন, ৬।তাদের জীবিত খলিফার জন্মদিন ও ৭। ঈসা(আ)এর জন্মদিন(বড়দিন বা ক্রিসমাস)।
[আল মাকরিযী, আহমাদ বিন আলী, আল মাওয়ারিজ ওয়াল ইতিবার বি যিকরিল খুতাতি ওয়াল আসার ৪৯০-৪৯৫ পৃষ্ঠা]
.
আহমদ ইবনু আলী আল-কালকাশান্দী (৮২১ হি.) লিখেছেন: “রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে ফাতেমী শাসক মিলাদুন্নবী উদযাপন করতেন। তাদের নিয়ম ছিল যে, এ উপলক্ষে বিপুল পরিমাণে উন্নত মানের মিষ্টান্ন তৈরি করা হতো। এই মিষ্টান্ন ৩০০ পিতলের খাঞ্চায় ভরা হতো। মিলাদের রাত্রিতে এই মিষ্টান্ন সকল তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। যেমন- প্রধান বিচারক, প্রধান শিয়ামত প্রচারক, দরবারের কারীগণ, বিভিন্ন মসজিদের খতীব ও প্রধানগণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানাদির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। এ উপলক্ষে খলিফা প্রাসাদের সামনের ব্যালকনিতে বসতেন। আসরের নামাযের পরে বিচারপতি বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজহার মসজিদে[তখন এটি শিয়াদের হাতে ছিল] গমন করতেন এবং সেখানে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত পরিমাণ সময় বসতেন। মসজিদ ও প্রাসাদের মধ্যবর্তী স্থানে অভ্যাগত পদস্থ মেহমানগণ বসে ফাতেমী শিয়া খলিফাকে সালাম প্রদানের জন্য অপেক্ষা করতেন। এ সময়ে ব্যালকনির জানালা খুলে হাত নেড়ে তিনি তাদের সালাম গ্রহণ করতেন। এরপর কারীগণ কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং বক্তাগণ বক্তৃতা প্রদান করতেন। বক্তৃতা অনুষ্ঠান শেষ হলে খলিফার সহচরগণ হাত নেড়ে সমবেতদের বিদায়ী সালাম জানাতেন। খিড়কী বন্ধ করা হতো এবং উপস্থিত সকলে নিজ নিজ ঘরে ফিরতেন। এভাবেই তারা আলীর(রা) জন্মদিনও পালন করত...।”
[আল-কালকাশান্দী, সুবুহুল আ’শা ৩/৪৯৮-৪৯৯]
.
এভাবে হিজরী ৪র্থ শতাব্দী থেকেই ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের শুরু হয়। তবে লক্ষণীয় যে, কায়রোর এই উৎসব ইসলামী বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েনি। সম্ভবত ইসমাঈলীয় শিয়াদের প্রতি সাধারণ মুসলিম সমাজের প্রকট ঘৃণার ফলেই তাদের এই উৎসবসমূহ অন্যান্য সুন্নী এলাকায় জনপ্রিয়তা পায়নি।সুন্নীদের মাঝে ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রবর্তক হচ্ছেন ইরাকের ইরবিল প্রদেশের শাসক আবু সাঈদ কূকুবূরী (৬৩০ হি.)।পরে তা ধীরে ধীরে অন্যান্য অঞ্চলেও চালু হয়ে যায়। সিরাতুন্নবী গবেষক ও ঐতিহাসিকগণ তাকেই মিলাদুন্নবীর প্রকৃত উদ্ভাবক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
[আস সালেহী, সিরাত শামিয়্যাহ ১/৩৬২]
.
অর্থাৎ আমরা দেখছি যে, আমাদের দেশসহ কিছু মুসলিম দেশে নবী(স) এর জন্মদিনের নামে যে ‘ঈদ’(!) চালু করা হয়েছে, তার সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করেছিল শিয়ারা।পরবর্তীতে তা সুন্নীদের মাঝে ছড়িয়েছে। মিলাদ উদযাপনকারী ভাইয়েরা কি এই ব্যাপারটি জানেন?
.
কোনো কোনো আলেম হিজরী ৭ম শতাব্দী অর্থাৎ চালু হবার পর থেকেই ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের বিরোধিতা করেছেন এই যুক্তিতে যে — সাহাবীগণ, তাবিঈগণ তাঁদের প্রচণ্ডতম নবীপ্রেম সত্ত্বেও কখনো তাঁদের আনন্দ এভাবে উৎসব বা উদযাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করেননি, কাজেই পরবর্তী যুগের মুসলমানদের জন্যও তা শরিয়ত-সঙ্গত হবে না। পরবর্তী যুগের মুসলমানদের উচিত প্রথম যুগের মুসলমানদের ন্যায় সার্বক্ষণিক সুন্নাত পালন, সিরাত[নবী(স) এর জীবনী] আলোচনা, দরুদ সালাম ও ক্বলবী ভালবাসার মাধ্যমে মহানবী(স) এর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো, অমুসলিমদের অনুকরণে জন্মদিন পালনের মাধ্যমে নয়।
তাঁদের যুক্তি হলো এ সকল অনুষ্ঠানের প্রসার সাহাবীদের ভালবাসা, ভক্তি ও আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতিকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসিকতা সৃষ্টি করবে, কারণ যারা এ সকল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভালবাসা ও আনন্দ প্রকাশ করবেন, তাঁদের মনে হতে থাকবে যে, সাহাবীদের মতো নিরব, অনানুষ্ঠানিক, সার্বক্ষণিক ভালবাসা ও ভক্তি প্রকাশ পদ্ধতির চেয়ে তাদের পদ্ধতিটাই উত্তম।
[[তাঁদের এ আশঙ্কা বর্তমানকালে সত্যে পরিনত হয়েছে।মিলাদ পালনকারীগণ এই নব উদ্ভাবনকে ‘উত্তম’ ও “আশেকে রাসুলের” কাজ বলে মনে করেন, আর যারা সাহাবী-তাবিঈদের ন্যায় নবী(স)এর প্রতি নিরব, অনানুষ্ঠানিক, সার্বক্ষণিক ভালবাসা ও ভক্তি প্রকাশ করেন ও মিলাদ পালন করেন না, তাদেরকে ‘ওহাবী’, ‘গুস্তাখে রাসুল’ ইত্যাদি বলে গালি দেয়।]]
সেই যুগের এ সকল নিষেধকারীদের মধ্যে রয়েছেন সপ্তম-অষ্টম হিজরী শতাব্দীর অন্যতম আলেম আল্লামা তাজুদ্দীন উমর ইবনু আলী আল-ফাকেহানী (৭৩৪ হি.), আল্লামা আবু আব্দুলাহ মুহম্মদ ইবনু মুহম্মদ ইবনুল হাজ্ব (৭৩৭ হি.), ৮ম হিজরী শতকের প্রখ্যাত আলেম আবু ইসহাক ইব্রাহীম ইবনু মূসা ইবনু মুহাম্মাদ আশ-শাতিবী (মৃত্যু ৭৯০ হি.) ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম [রহিমাহুমুল্লাহ আজমা’ঈন]।
.
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ "এহইয়াউস সুনান"--- খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র)।
No comments:
Post a Comment